লালমনিরহাট জেলা প্রতিনিধিঃ
লালমনিরহাট জেলার কালীগঞ্জ উপজেলা তুষভান্ডার ইউনিয়নের হাজীরহাটে দীর্ঘ ৩ যুগ পর স্বপ্ন পূরণ হয়েও তিস্তা নদীর বন্যায় জোড়া সেতুর দুই পাশে ভেঙে পড়েছে। চলাচলে কষ্টে ভুগতে হচ্ছে শত শত মানুষ কোন ভরসা পাচ্ছে না কি হবে কিভাবে তাঁরা মুক্তি পাবে।
উজানের পাহাড়ী ঢলে ভাসছে তিস্তা নদীর তীরবর্তী মানুষ। নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় তিস্তা ব্যারেজের সবকটি জলকপাট খুলে দেওয়া হয়েছে। এতে করে লালমনিরহাটের ৪ টি উপজেলার তিস্তা নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল, চর ও দ্বীপ চরে বন্যা পরিস্থিতি তৈরী হয়েছে। গবাদী পশু নিয়ে পানিবন্দী মানুষেরা বিপাকে পড়েছেন। অনেক স্থানে বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় পানিবন্দী পরিবারের মাঝে শুকনা খাবার বিতরণ করেছে প্রশাসন।
লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, ভারতে ভারী ও অতি ভারী বৃষ্টির কারণে উজানের পাহাড়ী ঢলে তিস্তা নদীর পানি বেড়েছে। শুক্রবার (১৪ জুলাই) সকাল ৬টায় তিস্তা নদীর পানি ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ৪০ সেন্টিমিটার উপর দিয় প্রবাহিত হয়েছে। পানি বৃদ্ধিতে কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী ইউনিয়নের তুষভান্ডার ইউনিয়ন কাকিনা ইউনিয়নের সহ আরও তিনটি উপজেলায় সরেজমিনে দেখা যায়, তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল, চর ও দ্বীপচরে বন্যা পরিস্থিতি তৈরী হয়েছে। কোথাও গলা সমান, কোথাও কোমড়, কোথাও বা হাঁটু পানি হয়েছে। বন্যার কারণে কৃষকদের পাট, মরিচ, বাদামের ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। রাস্তাগুলো পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় স্থানীয়রা ঝুঁকি নিয়ে কলা গাছের ভেলা ও ডিঙ্গি নৌকায় করে যাতায়াত করছেন।
চর ছালাপাকের কৃষক সন্তেস মিয়া বলেন, নদীর পানি কয়েক দিন ধরি বাড়তোছে, আবার কমতোছে। কাইল আইত (রাত) থ্যাকি তিস্তা নদীর পানি বেশি বাড়ছে। রাইতোত ক্ষেতগুলা পানিত ডুবি গেইছে। আইজ আস্তাসুদ্দা ডুবি গেইছে। হামরা এ্যালা পানির মাঝোত গরু-ছাগল নিয়া আটকা পড়ি আছি। শুনতোছি পানি নাকি আরও বাড়বে। পানি আরও বাড়লে বাড়িত থাকা যাবার ন্যায়।
একই এলাকার কৃষক মনিরুজ্জামান বলেন, প্রত্যেকবারে পানি বাড়লে হামার ম্যালা কষ্ট হয়। ঘর-দুয়ার সউগ ডুবি যায়। আবাদী জমি, গরু-ছাগল নদীত ভাসি যায়। এইবারও পানির জোর তেমন দেখতোছি। এই সমস্যা থ্যাকি হামরা কবে মুক্তি পামো জানি না।
শংকরদহের মোসলেমা বেগম বলেন, পানিত থ্যাকি ছোট ছোট ছাওয়া নিয়া আন্দাবাড়ি করা নাগে। এর মাঝোত ছোট ছাওয়াগুলা খালি পানিত নামবার চায়, সাপেরও ভয় থাকে। মহিলা মানুষের ম্যালা কষ্ট।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব জহির ইমাম বলেন, তুষভান্ডার ইউনিয়নের হাজিরহাট জোড়া সেতু তিস্তার বন্যায় দুই পাশ ভেঙ্গে গেছে দেখেছি পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে আলোচনা হয়েছে তাঁরা ব্লগের ব্যাবস্তা করবে ও মানুষ চলাচলের ব্যবস্তা করা হবে। পানিবন্দী মানুষদের উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে চাহিদা মত অন্য এলাকায় সরকারী ত্রাণবোর্ডের সাথে পৌঁছানো হবে। আমাদের পর্যাপ্ত খাদ্য মজুদ রয়েছে। এছাড়া বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে। বন্যার স্থায়ীত্ব বেশি হলে মানুষদের ত্রাণ ও দূর্যোগ মন্ত্রণালয়ের দেওয়া বোডের মাধ্যমে নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে আনা হবে।
লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীশুনীল কুমার বলেন, তিস্তা নদীর পানি কিছুটা কমতে শুরু করেছে । সকাল ৯ টায় ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ৩২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। নদীর পানি মধ্যরাত নাগাদ আরও বাড়তে পারে।